রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন
জাবি প্রতিনিধি, কালের খবর :
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে তিন দফা দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনের দুই দফা সমাধান হয়েছে এবং দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে সময় নেয়া হয়েছে। আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ‘মহাপরিকল্পনা পর্যালোচনা’ এবং ‘তিনটি হল স্থানান্তর’- এর বিষয়ে সম্মত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আর ‘দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের’ বিষয়ে আইনি পরামর্শের জন্য তিন কার্যদিবস সময় নিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।
আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আন্দোলনকারীদের পক্ষে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা কানিজ আলোচনারভিত্তিতে তিন দফা দাবির বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো পড়ে শোনান।
তিনি বলেন, ‘তিন দফা দাবির মধ্যে প্রথম দফা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘিরে তিনটি আবাসিক হল নির্মাণের স্থান পুনর্নিধারণ করা হবে। এর মধ্যে একটি হল নির্ধারিত স্থানের ১০০ ফুট পশ্চিমে সরিয়ে নেয়া হবে। আর দুটি হল সরিয়ে নেয়া হবে। নতুন জায়গা কোথায় হবে তা নির্ধারণের জন্য মহাপরিকল্পনা পর্যালোচনা কমিটি, সকল ছাত্র সংগঠন, এবং অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে।’
তৃতীয় দফার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পর্যালোচনারভিত্তিতে মহাপরিকল্পনার প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। বর্তমানে মহাপরিকল্পনা পর্যালোচনার জন্য যে বিশেষজ্ঞ কমিটি রয়েছে তা পুনর্গঠন করা হবে। প্রকল্পের কাজের গুণগত মান নিরীক্ষা করার জন্য একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠন করা হবে। প্রকল্পের কাজের ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যয়ের হিসাব কাজের অগ্রগতি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিস থেকে সর্বদলীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে জানানো হবে।’
প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেয়ার অভিযোগের ‘বিচার বিভাগীয় তদন্তের’ বিষয়ে আইনি পরামর্শের জন্য তিন কার্যদিবস অর্থাৎ আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বুধবার দুই পক্ষ আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
আলোচনা শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান এটিকে সাময়িক বিজয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু তিনটি দাবির মধ্যে আমাদের দুটি দাবি প্রশাসন মেনে নিয়েছে, তাই আমরা এটিকে সাময়িক বিজয় বলতে পারি। তবে আন্দোলন থেমে যাবে না; দুর্নীতির বিষয়ে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলনের কাঠামোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তীতে জানিয়ে দেয় হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে এ আলোচনা শুরু হয়।
আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা কানিজ, প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আহসান হাবিব অংশ নিয়েছেন।
অন্যদিকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। আলোচনায় অংশ নেয়া শিক্ষকরা হলেন- ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, রায়হান রাইন, এএসএম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দীন, অধ্যাপক খবির উদ্দিন এবং বাংলা বিভাগের শামীমা সুলতানা ও তারেক রেজা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয়, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক, কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হক, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম পাপ্পু, প্রচার সম্পাদক মারুফ মোজাম্মেল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার, সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) জাবি শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে, দপ্তর সম্পাদক রেবেকা আহমেদ এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার মুখপাত্র খান মুনতাসির আরমান, যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির ও আরিফুল ইসলাম আলোচনায় অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, তিন দফা দাবিতে ২৫ আগস্ট থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর ব্যানারে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এক পক্ষ।